পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মহিলাসহ কয়েকজন রোগিকে মারপিট, ভর্তি রোগিদের সাথে সকাল সন্ধ্যা ২ বার রাউন্ডের নিয়ম থাকলেও শুধু সকালে রাউন্ড দেয়, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শুন্য হয়।সেই সুবাদে তিনি ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ পান। তখন থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি তার প্রেসক্রিপশন প্যাডে ভারপ্রাপ্ত না লিখে সরাসরি আবাসিক মেডিকেল অফিসার লেখেন।
রোববার (২৪ এপ্রিল) রাত ১০টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটিরত দুই নার্সকে রাউন্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন,আমরা এসে রাউন্ডের কোন ডাক্তারকে পাইনি।ডাক্তার রাউন্ডে আসবে কিনা তা আমরা বলতে পারবোনা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগী জানান, ডাক্তার মামুন আব্দুল্লাহ প্রতিদিন সকালে একবার আসে আমাদের দেখতে।আর রাতে শুধু নার্সরা আমাদের দেখাশোনা করে।
সাঁথিয়া পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ বছরের একটা মেয়ে কান্নাজডিত কন্ঠে বলেন,আমি অসুস্থতার কারণে ১০/০৩/২০২০ তারিখে সাঁথিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই।২১/০৩/২০২০ তারিখ রাত ৮ টায় হঠাৎ করেই আমার ওয়ার্ডে এসে ডাক্তার মামুন বলেন, আপনাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আপনি বাড়ি চলে যান।আমি বললাম, স্যার, আমি মেয়েমানুষ। এই রাতে কিভাবে একা বাড়ি যাবো? ওনি বললেন, এসব আমি জানিনা।
ডাক্তার আমার হাতে ছাড়পত্র দেওয়ার সময় আমি মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করতেই আমার হাতে থাকা মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।এসময় আমি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসি। সেও আমার পিছু পিছু দৌড়ে এসে আমার গায়ের ওডনা টেনে ধরে টেনে হিঁচড়ে সেবিকাকক্ষে আমাকে নিয়ে যায় এবং রুমের দরজা বন্ধ করে আমাকে অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশের সহায়তায় আমি ছাড়া পাই।
সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর,সাঁথিয়া থানায় এবং সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুবিচার পাইনি বলে অভিযোগ করেন।
ঘুঘুদহ গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, কয়েক মাস আগে আমি আর আমার বউ নার্সের সাথে একটা সমস্যার ব্যাপারে আলাপ করতে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সের রুমে ঢুকতে যাই। নার্সের রুমে বসে ডাক্তার মামুন ফোনে কিসের যেন ভিডিও দেখতেছিলো।আমাকে দেখেই অসভ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলো। তুই এখানে কেন আসছিস? আমি বললাম, স্যার, গাল পারেন কেন, ভালোভাবে বললেই তো চলে যেতে পারি।সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে দৌড়ে এসে আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে।আমার বউ এর চিৎকারে নার্স এবং রোগীর লোকজন এসে আমাকে রক্ষা করে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনের হাত থেকে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন হাসপাতালের নিকটস্থ কোনাবাড়য়িা গ্রামে বাড়ি হওয়ায় সে কাউকেই পরোয়া করেনা। রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করে।এমনকি কয়েকজন রোগীর গায়েও হাত তুলেছে। তাকে মাঝে মধ্যেই অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্টাসনো করতে দেখা যায়। ভুক্তভোগী রোগী এবং হাসপাতালের স্টাফদের সাথে কথা বলার কয়েকটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়,২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান মুকুল (৫৫)কে সাঁথিয়া ইতালি সুপার মার্কেটে তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে ভুল ইনজেকশনের কারণে মৃত্যুর অভিযোগে ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল।
ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার যে রাউন্ড ২ বেলা আপনাকে কে বলছে? আমি কার গায়ে হাত দিছি, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন? এসব বানোয়াট।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জান্নাতুল ফেরদৌস বৈশাখী বলেন,রাউন্ডের দায়িত্ব আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এর। সকাল,সন্ধ্যায় নিয়মিত আরএমও মামুনই রাউন্ড দেয়।যখন আরএমও থাকেনা তখন আমাদের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার রাউন্ড দেয়। আজ রাতে রাউন্ড দেয় নাই কেন, আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি।
এফএইচ/ডিপি/আরএই্চ