সাত মাস বয়সী শিশু আরাফাত হোসেন। যে বয়সে হাসি-খুশি কান্নাকাটি, খুনসুঁটিতে মেতে থাকার কথা সেই সময় শিশুটির দিনরাত কাটে কান্নাকাটি করে। জীবনের শুরুর সময় সামান্য এ বয়সে শিশুটিকে একাধিকবার ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তার অসুস্থতা।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর মনজিল হোসেনের ছেলে আরাফাতের জন্ম থেকেই হার্টে ছিদ্র। কখনো শ্বাসকষ্ট, আবার কখনো বারবার বমি ও হাসপাতালের বিছানা এখন নিত্যসঙ্গী এই শিশুর।
উন্নত চিকিৎসা এবং অপারেশন ছাড়া সুস্থ হওয়া সম্ভব নয় আরাফাতের। এর জন্য বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন। দিনমজুর বাবার পক্ষে ছেলের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সম্প্রতি আরাফাত অসুস্থ হলে মা অযুফা খাতুন তার শেষ সম্বল কানের দুল বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। ছেলের চিন্তায় এখন দিশেহারা অসহায় বাবা-মা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালান মনজিল হোসেন। দুই সন্তানের মধ্যে আরাফাত ছোট। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে টেনেটুনে সংসার চললেও সুখের অভাব ছিল না পরিবারে। কিন্তু আরাফাতের জন্মের একমাসের মাথায় অসুস্থ হয় সে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে যতদিন গড়িয়েছে আরাফাত ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত আরাফাতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হলে আরাফাতকে পাবনার শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নীতিশ কুমার কুন্ডুকে দেখান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে আরাফাতের হার্টে ছিদ্র রয়েছে। আরাফাতের অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এছাড়া খুব তাড়াতাড়ি তাকে ঢাকায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা এবং অপারেশনের পরামর্শ দেন।
পরে আরাফাতকে পাবনা সদর হাসপাতালে ১০ দিন ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় দশ হাজার টাকার বেশি। ওষুধের টাকা জোগাড় করতে না পেরে অবশেষে শেষ সম্বল কানের দুল বিক্রি করতে বাধ্য হন মা অযুফা খাতুন। এদিকে অসহায় এই পরিবারের কাছে অপারেশন তো দূরের কথা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার টাকাই নেই। করুণ চাহনিতে ছেলের যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করছেন অসহায় বাবা-মা।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মা অযুফা খাতুন বলেন, যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন মনে হয় ছেলে মারা যাবে। ওই সময় কোনো দিশা না পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে আমার নিজের নিঃশ্বাস দেই। দম বন্ধ হয়ে আসে, তবুও বাঁচুক আমার ছেলের। আমার শেষ সম্বল কানের দুলটা পর্যন্ত বিক্রি করেছি ছেলের চিকিৎসায়। আমাদের আর কোনো সম্বল নেই। ঢাকা নিয়ে যাব, সে টাকাও নেই। এ সময় আরাফাতকে সুস্থ করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুতি জানান অসহায় এই মা।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরমিলা আক্তার ঝুমি বলেন, আরাফাত নামের ওই শিশুর চিকিৎসার কাগজপত্র এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে যা মনে হয়েছে, তার দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়া এই চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল।
বিলচলন ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুবুল আলম মিলন বলেন, হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় আজকে সকালেও স্থানীয় একজনের কাছ থেকে ৫শ টাকা হাওলাত করে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। পরিবারটি খুবই অসহায়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো শিশুটি সুচিকিৎসা পেত।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, পরিবারটির খোঁজ নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
আরাফাতের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে বা সহযোগিতা করতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করা যেতে পারে- ০১৩১৭-৪৪৭০৬৪।
-যুগান্তর