রোববার (২২ মে) রাত ১২টার দিকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থীর নাম নুরুল আমিন। তিনি অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আহত শিক্ষার্থী নুরুল আমিন চলতি মাসের ২০ তারিখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গণরুমে তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১৩তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগ দিতে দেখে। র্যাগ দেওয়ার সময় গণরুমে নুরুল আমিনের প্রবেশে বিরক্তিবোধ করে ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
এরপর তারা বিষয়টি ১১তম ব্যাচের সিনিয়রদের কাছে জানায়। ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নুরুল আমিনের প্রতি গণরুমে র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ এবং ভিডিয়ো করার অভিযোগ এনে রাতে হলের ছাদে তাকে বেধড়ক মারধর করে। রাত ১২টার দিকে অজ্ঞান অবস্থায় হলের ৩ তলার ৩১৩ নাম্বার রুমের সামনে গিয়ে নুরুল আমিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্সে করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহত শিক্ষার্থী নুরুল আমিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২২ মে রাত দশটার দিকে টিউশনি থেকে হলে ফেরার পর তার রুমমেটের কাছ থেকে জানতে পারেন কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে মারার জন্য ঘুরছে। এই ঘটনা শোনার পর পরই তিনি ৩১৩ নাম্বার রুমে এক বড় ভাইকে বিষয়টি জানান।
৩১৩ নাম্বার রুমে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক পোদ্দার, আইসিই বিভাগের শাহ আলম, রুবেল, মিলন, মঞ্জুরুল, ইইই বিভাগের সীমান্তসহ ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ৩১৩ নাম্বার রুম থেকে বের করে দুইজন শিক্ষার্থী তার হাত দুটি শক্ত করে ধরে এবং দুজন শিক্ষার্থী মুখ চেপে ধরে হলের ৪ তলার রিডিং রুমের ছাদের উপরে নিয়ে যায়। এর পরপরই তাদের সাথে যুক্ত হয় আরও ১০-১২ জন শিক্ষার্থী।
নুরুল আমিন আরও জানান, ছাদে নিয়ে যাওয়ার পর দুইজন শিক্ষার্থী তার হাত ও মুখ ধরে রাখে এবং বাকিরা তাকে ঘিরে রাখেন। এরপরই অনিক পোদ্দার তার কানে আঘাত করে। তারপর এক এক করে সবাই তাকে বেধড়ক মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী বলে উঠে, ওকে ছাদ থেকে ফেলে দে, জেল খাটা প্রয়োজন হলে জেল খাটবো। রাত সাড়ে এগারটা থেকে বারটা পর্যন্ত এভাবে মারধর চলার পর যখন তার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, তখন তাকে একা রুমের দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে যে অভিযোগ এনে তাকে মারধর করা হয়েছে সেই বিষযে নুরুল আমিন জানান, ২০ তারিখ তার বন্ধুর সাথে গণরুমে গিয়ে দেখা করে চলে আসেন। কোনো কথা কিংবা ভিডিয়ো করেননি। তাকে মারধর করার পেছনে র্যাগিং একটা ক্লু, এর পেছনে আরও বড় কোনো ইস্যু আছে বলে তিনি মনে করেন।
মারধরের ঘটনা শোনার পরপরই রাত ১টার দিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হাসিবুর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা দফতরের পরিচালক ড. সমীরণ কুমার সাহা নুরুল আমিনকে হাসপাতালে দেখতে যান।
এছাড়া সোমবার (২৩ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন এবং বিকালে উপ-উপাচার্য ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান নুরুল আমিনকে পাবনা সদর হাসপাতালে দেখতে যান।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর সাইফুল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, যেটি ঘটেছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা চাই না সামনে কোনো ঘটনা ঘটুক। তাই মাননীয় উপাচার্য মহোদয়সহ আমরা ছাত্রটিকে হাসপাতালে দেখতে যাই। ইতোমধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হল প্রভোস্টকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এ ঘটনার সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার পাবে।
প্রসঙ্গত, নুরুল আমিন গত ১৭ মে হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন। এরপর থেকেই হলের ডাইনিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। হলের ডাইনিংয়ের খাবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে রাজনৈতিক চাপের কারণে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে নিশ্চুপ করে আছেন বলে জানা গেছে।