২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক উমা রায়ের বিরুদ্ধে তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রোগ্রামের টিফিনের টাকা আত্মসাৎসহ ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষরিত একাধিক লিখিত অভিযোগে এ তথ্য জানা গেছে। হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগটি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধিদপ্তরের প্রশাসন ও মিডওয়াইফারি বিভাগের সহকারী পরিচালক মীরা রানী দাসের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। তারা অভিযুক্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক উমা রায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। তবে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগীদের দেওয়া অভিযোগে জানা গেছে, সেবা তত্ত্বাবধায়ক উমা রায় দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছেন। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রোগ্রামের টিফিনের জন্য টাকা আত্মসাৎ, অতিরিক্ত ও অসময়ে ডিউটি দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, এসিআর-ডিজিএনএম-এ টাকা জমা দেওয়ার নাম করে অর্থ আদায়, নার্সিং বিষয়ে ট্রেনিং করার নামে অর্থ আদায়, চেয়ার ও অর্গানোগ্রাম কেনার নামে চাঁদা আদায় এবং বেসরকারি নার্সি ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টার্ন করতে আসা শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়সহ ২৩টিরও বেশি অভিযোগ রয়েছে উমা রায়ের বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, উমা রায়ের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট। আমরা বিভিন্ন সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও সিভিল সার্জনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। এজন্য তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন, কোনো তোয়াক্কা করেন না। তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, তিনি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি আমাদের তার ব্যক্তিগত কাজেও জোরপূর্বক ব্যবহার করে থাকেন। বাধ্য হয়েই আমরা উচ্চ মহলে অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক উমা রায় বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে আমি আমার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের জবাব দিয়েছি। আমার চাকরির আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে। এই মুহূর্তে আমি এসব বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, অভিযোগুলো আমার আগের সহকারী পরিচালকের সময়ে করা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, অভিযোগের বিষয়ে নার্সিং অধিদপ্তরের ডিজি পর্যায় থেকে তদন্ত হচ্ছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত করে গেছেন। তবে এই প্রতিবেদন পাবনাতে নয়, তারা নার্সিং অধিদপ্তরে জমা দেবেন। এর বাইরে এ বিষয়ে এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে পারছি না।