সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৪০-৪৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শয্যা না থাকায় অধিকাংশ রোগীর জায়গা হয়েছে বারান্দা অথবা করিডোরে। ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। রোগীরা ১০ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাদের জন্য শয্যা বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছোট্ট একটি বারান্দায় মানুষ গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ থাকায় ডায়রিয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১১০ জন। বেশিরভাগ রোগী হাসপাতালের বারান্দায় বা করিডোরে অবস্থান করছেন। গত দুই সপ্তাহ যাবত রোগীর চাপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। জরুরি বিভাগেও প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গড়ে ৪৫-৫০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। কিছু মধ্য বয়সী রোগীও আছে। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১১০ জন রোগী ভর্তি আছেন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫০টি। কিন্তু এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন।
পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের দুবলিয়া এলাকার ডায়রিয়া রোগী হামিদা খাতুন বলেন , ‘হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন ধরে আমার পেটের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শেও কোন কাজ না হওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ডায়রিয়া ঠিক হওয়ার কোন লক্ষনই পাচ্ছি না।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভানুমতি ও খালেকা খাতুন বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। খাবার স্যালাইন ঠিকমত দেওয়া হলেও অন্যান্য স্যালাইন আমরা পাচ্ছি না। এই ছোট্ট রুমে এত মানুষ! রোগ ঠিক হওয়া তো দূরের কথা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ রহিমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে চলা অতিরিক্ত গরমে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসক সংকটের জন্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন থাকলেও কলেরা স্যালাইন নেই।’
তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য যে স্যালাইন সেই কলেরা স্যালাইন ৬ মাস আগ থেকে ফুরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেটি সরবরাহ করা হয়নি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্যও নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসক নেই। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নেই ।’ হাসপাতালে জনসংখ্যার প্রতি বিবেচনা করে পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
স্যালাইনের স্বল্পতার কথা স্বীকার করলেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরর। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের জন্য খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। কলেরা স্যালাইনে কিছুটা স্বল্পতা রয়েছে। খুব দ্রুতই সরবরাহ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপে কোনও ওয়ার্ডেই নির্ধারিত শয্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি বা চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। ১২০ বেডের চিকিৎসক দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও আমরা এই সীমিত ব্যবস্থার মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য ব্যায়াম করানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন।’
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও সেখানে বাড়তি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সব ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদেও জন্য ব্যবহৃত ‘কলেরা স্যালাইন’ খুব দ্রুতই সরবরাহ করা হবে।’
