খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুজানগর উপজেলা শহরের নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে আগামী ২৯ জুলাই শনিবার সভাপতি একটি শান্তি সমাবেশ আহবান করেছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক এই সমাবেশকে দলীয় সমাবেশ নয় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন সভাপতি। বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার দিকে কলেজ মাঠে সমাবেশের জন্য বানানো মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা আ.লীগের একাধিক দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব ও সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের মধ্যে বিরোধ চলছে। কেউ কারও ছায়া পাড়ান না । একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতেও দিবা বোধ করেন না। দলীয় কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করতে থাকে।
এর মধ্যেই সভাপতি আব্দুল ওহাব গত ২২ জুলাই উপজেলার নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে বিএনপি-জামায়াতের চলমান নৈরাজ্যর প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশের ডাক দেন। ঐদিন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের বাবা-মাতা আহমেদ তফিজ উদ্দিন ও ফিরোজা বেগম স্বারক গন্থ সূচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে। অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকজন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আসেন। এজন্য সমাবেশটি স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ২৯ জুলাই শান্তি সমাবেশের দিন ঠিক করা হয়। এর মধ্যেই দলের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান সমাবেশের বিরোধিতা শুরু করেন। তিনি গত ২৪ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান সমাবেশটি সুজানগর উপজেলা আ.লীগের নয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান জানিয়েছেন, নিজাম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ মাঠে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যে শান্তি সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে, সেই শান্তি সমাবেশের সঙ্গে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এই সমাবেশ আয়োজনের মধ্যদিয়ে একটি পক্ষ সুজানগর উপজেলা আ.লীগকে বিভক্ত করতে চায়।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষীতে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) পাল্টা বিবৃতি দেন সভাপতি আব্দুল ওহাব।
বিবৃতিতে তিনি জানান, ২৯ জুলাই নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রী কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ ২২ জনের মধ্যে ১৫ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৮ জন চেয়ারম্যান এই শান্তি সমাবেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন। এর পরেও সাধারণ সম্পাদক বিদেশে থেকে শান্তি সমাবেশকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন।
বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপরাজনীতির প্রতিবাদে এই শান্তি সমাবেশ হবে। তাই নেতৃবৃন্দকে বিভ্রন্ত না হয়ে সমাবেশ সফল করার আহবান জানানো হলো।
এদিকে সভাপতি-সম্পাদকের এই পাল্টাপাল্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এতে নির্ধারিত শান্তি সমাবেশের দিনে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন অনেকেই। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন থানা পুলিশ।
সুজানগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, কর্মসূচি নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা দেখছিনা। তবে যদি কোন বিশৃঙ্খলা হয় তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুজানগর উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের নামে সেখানে ভুড়িভোজের আয়োজন করছেন দলের সভাপতি। ব্যক্তি কর্মসূচি কখনো দলীয় নাম ব্যবহার করা যায়না। এই ধরনের হঠকারী কর্মসূচির পালনের পক্ষে আমরা না। জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে আমাদের সকলকে মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলেছেন। সেখানে তারা ভুড়িভোজ করবেন এটি মেনে নেয়া যায়না। এই কর্মসূচি গ্রহণের পূর্বে কোন আলোচনা হয়নি আমাদের। এটি ব্যক্তি কারো আয়োজনে হতে পারে। তাই দলের সাধারন নেতাকর্মীদের সচেতনতার আর বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। দলের মধ্যে দিধা বিভক্ত তৈরি করতে একটি পক্ষ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নিজের মতে করে চলছেন।
সুজানগর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, আমাদের উপজেলাতে এখনো পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। সারা দেশের মত আমাদের সুজানগর উপজেলাতে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের ইচ্ছাতে এই উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শান্তি সমাবেশের মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছে এক পক্ষ। তবুও আমরা আগামীকালের অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলের সাধারন সম্পাদক শাহীন গুঠি কয়েক লোককে সঙ্গে নিয়ে সুজানগরের রাজনীতি নষ্ট করছে।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রাতে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। এটা নিয়ে আর দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের স্বার্থে যে কেউ সমাবেশ করতে পারবে। এখানে বাধা দেওয়ার কিছু নাই। সুজানগরে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে আগামী ৬ আগষ্ট ঢাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বর্ধিত সভা রয়েছে। সুযো পেলে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সমস্যার কথা বলব।