সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ফারাদপুর গ্রামের আরশেদ আলী মোল্লাসহ ৫ কৃষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্তমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাদশা প্রামানিক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
রোববার ( ৯ এপ্রিল) বিকেলে ভুক্তভোগীরা দুবলিয়া ফাঁড়িতে মৌখিকভাবে প্রাথমিক একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গত (৩১) মার্চ দুপুরে দুবলিয়ার ফারাদপুর গ্রামে একটি হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১ এপ্রিল আতাইকুলা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয় বাদশা প্রামানিক নামের এক ব্যক্তি। যেটি মিথ্যা ও উদ্যেশপ্রণোদিত।
ভুক্তভোগী কৃষকরা হলেন-ফারাদপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ আরশেদ আলী মোল্লা (৭০), তোফাজ্জল খার ছেলে মোঃ আজমল খাঁ (৩৮), দারোগ আলীর ছেলে মোঃ আলতাফ খাঁ (৪০), মোক্তার খার ছেলে মোঃ কালু খাঁ (৪০) তোফাজ্জল খার ছেলে নজরুল ইসলাম খাঁ (৪৩)।
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ফারাদপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ দুপুরের দিকে ফারাদপুর গ্রামের আরশেদ আলী মোল্লা ও বাদশা প্রামানিকের স্ত্রীর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় আরশেদ আলী মোল্লার হাতে থাকা দায়ের আঘাত লেগে বাদশা প্রামানিকের স্ত্রী মাসুরা খাতুনের হাত সামান্য একটু কেটে যায়। ঘটনার পরপরই দুবলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ পুলিশের ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গিয়ে আতাইকুলা থানায় আরশেদ আলী মোল্লাসহ ৫ কৃষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়। যেটি দুবলিয়া ফাঁড়ি পুলিশ তদন্ত করে এর কোন সত্যতা পায়নি বলে জানা গেছে। লিখিত অভিযোগ যাদের নামে দেওয়া হয়েছেন তাদের ৪ জনই সেদিন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে কাজকর্ম করছিল। সবাই দিনমজুরী করে কোনমত জীবনযাপন করে আসছে। এছাড়াও বৃদ্ধ কৃষক আরশেদ আলী মোল্লার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হয়।
ঘটনাসূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বাদশা প্রামানিকের স্ত্রী মাসুরা খাতুনের সঙ্গে জমির আইল ঘেরা ভাঙ্গা নিয়ে তর্কাতর্কি হলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে হাতে থাকা দায়ের আঘাতে হাত সামান্য একটু ছিলাফুলে যায়। এসময় বৃদ্ধাকে মারধর এ কিল ঘুষি দেওয়া কোন ঘটনাই ঘটে না। গত ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে স্থানীয় মাঠের মধ্যে গিয়ে বাদশা প্রামানিক ও তার ছেলে নাজমুল হোসেন লিটন মিলে আজমল হোসেনকে বেধরক মারধর করে। এসময় আজমল থানায় অভিযোগ দিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে বাদশা প্রামানিক ও তার ছেলে তার উপর ক্ষিপ্ত থাকে। সেদিন আরশেদ আলী মোল্লার সঙ্গে সামান্য মারামারি লাগলেও আজমল হোসেনসহ বাকি নিরিহ ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। যেটি ষড়যন্তমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী কৃষক আজমল হোসেন বলেন, যেদিন এখানে মারামারি হয় সেদিন আমি মাঠে কাজ করি। এঘটনা কিছুই জানি না। অথচ থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে বাদশা প্রামানিক। আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে জরিয়ে এমন কাজ করা হয়েছে। মূলত গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩/২৪ তারিখের দিকে আমি জমিতে ফসল কাটতে গেলে বাদশা প্রামানিক ও তার ছেলে নাজমুল হোসেন লিটন আমাকে মারধর করে। এসময় আমি থানায় মামলা করি বাবা-ছেলের নামে। মূল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আগের ঘটনার জন্য কাটা দিয়ে কাটা খোলার চেষ্টা করছে তারা।
আরেক কৃষক কালু খা বলেন, আমি দিন এনে দিন খাই। পরিবার পরিজন নিয়ে কৃষি কাজ করে জীবনজীবিকা নির্বাহ করি। এসব মারামারি বুঝি না। সকাল হলেই কাজে বের হতে হয়। ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ঘটনার দিন আমি বাহিরে শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলাম। রাতে বাড়িতে এসে শুনি যে আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ এলাকায় জানাজানি হলে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী বেশ অবাক হয়েছে।
এলাকাবাসীর এক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাদশা প্রামানিক কথায় কথায় মানুষের নামে থানায় অভিযোগ দিতে যায়। নিজের জায়গা দিয়ে অন্য কাউকে বেরও হতে দেয় না। তাদের কথা এলাকায় কোন ঝামেলা হতেই পারে। তাই বলে কি বারবার পুলিশ আনতে হবে। সব মিলিয়ে এলাকার শান্তি চান তারা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আরশেদ আলী মোল্লা বলেন, সেদিন আমি বাঁশঝাড়ে বাঁশ কাটার জন্য হাতে দা নিয়ে বের হই৷ এসময় বাদশার জমির আইলের উপর গেলে তার স্ত্রী আমাকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। তখন আমি নিষেধ করলে ঝগড়া বেধে যায়। তখন হাতাহাতির সময় আমার হাতের দায়ের একটি আঘাত লেগেছে তার হাতে। যদি আমি তাকে দা দিয়ে কোপই দিতাম তাহলে আরও কয়েক জায়গায় লাগদ। আর তার পুরো হাত কেটে পরে যেত। আর এর জন্য আমরা মিমাংসার কথাও বলেছি। কোনকিছুই তারা না শুনে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসছে। জমিজমা কেন্দ্রীক একটু ঝামেলা থাকতেই পারে। এজন্য কি এতকিছু করা লাগবে। আর আমাকে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী বলে ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। বৃদ্ধ বয়সে এগুলো করার প্রশ্নই আসে না। বাদশা প্রামানিকের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। কারও সাথে কোন কিছু লাগলেই থানায় চলে যায়। কথায় কথায় মামলার হুমকি দেয়। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি আশ্রয় নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বাদশা প্রামানিকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এজন্য বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আতাইকুলা থানার দুবলিয়া ফাঁড়ি পুলিশের (ইনচার্জ) এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরে ওসি স্যারের নির্দেশনায় আমি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। আরশেদ আলীর দায়ের আঘাতে বৃদ্ধার হাত ছিলাফুলা হলেও অন্য ৪ জন কৃষক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই। তাদেরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।