কমিটি গঠনের ৭ দিনের মাথায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পাবনা জেলা বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটির নেতারা। তবে প্রোগ্রামে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খেয়েছেন। বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোলের মধ্যেই সংক্ষিপ্ত আকারে শেষ হয় নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম এই প্রোগ্রাম।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিত ও মতবিনিময় করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এদিন বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও বিশৃঙ্খলার কারণে শুরু হয় তিন ঘন্টা পর। কিন্তু নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড চাপে অডিটোরিয়াম ভরপুর হয়ে যায়, দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোল। বসার জায়গা নিয়ে তর্কাকর্তিতে লিপ্ত হয় নেতাকর্মীরা। এসময় সাংবাদিকদের জন্য নির্ধাারিত স্থানও দখল করেন নেতারা।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নবগঠিত জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু, আনিসুল হক বাবু, আবু ওবায়েদ শেখ তুহিন ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার মাইক হাতে নেতাকর্মীদেের অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধও কর্নপাত করেননি নেতাকর্মীরা। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রোগ্রাম শেষ করেন নতুন নেতারা।
এর আগে প্রোগ্রাম শুরুর আগেই সকাল ১০টা থেকেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হোন প্রেসক্লাব গলিতে। নিজ বলয়ের নেতার নামে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এতে প্রেসক্লাব গলিতে যানচলাচলসহ দোকানদারদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
সংক্ষিপ্ত সভায় লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কমিটির সামনে রয়েছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণের ভোটারধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন-সংগ্রামে, সরকারের সকল অত্যাচার নির্বাচিত দমন নিপীড়নকে পরাজিত করে বিজয়ী যোদ্ধা হিসেবে পাবনাবাসীর কাছে সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত হবে। ন্যায় বিচার, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এই কমিটির ভূমিকা থাকবে সর্বোচ্চ অগ্রণী।
নবগঠিত কমিটির আহবায়ক আগের কমিটির আহবায়ক ছিলেন। আগের কমিটির যেহেতু নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ফলে এবারের কমিটি কতটুকু সফলতা আনতে পারবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিব বলেন, করোনার কারণে আমাদের আগের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তারপরও আমাদের রাত-দিন কাজ করেছি। আগে হয়নি বলে এবার হবে না তা নয়। এবার আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাবনার সকল ইউনিয়ন, থানা, পৌর ও উপজেলা বিএনপি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করবো। এরপর দ্রুতই পাবনা জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে।
গ্রুপিংয়ের কারণে আগের কমিটির মতো এবারের কমিটিতেও উপেক্ষিত জেলা বিএনপির একটি বড় অংশ। সংবাদ সম্মেলনের সেই অংশের কেউ উপস্থিতও ছিলেন না। নিজেদের অভ্যর্থরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনে এই কমিটি কতটা উদ্যোগী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের উদাহরণ টেনে নবগঠিত কমিটির আহবায়ক বলেন, আমাদের মধ্যে এমন কোনও গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব নেই। আজকের প্রোগ্রামে সবার উপস্থিতিই প্রমাণ করে আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পরিচয় তুলে ধরেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট খন্দকার মাসুদুর রহমান মাসুদ (মাসুদ খন্দকার)। উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু, আনিসুল হক বাবু, আবু ওবায়েদ শেখ তুহিন, সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক ও পাবনা-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব কে এম আনোয়ারুল ইসলামসহ জেলা, উপজেলা, পৌর, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, আগের কমিটির সর্বশেষ প্রোগ্রামও দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পণ্ড হয়েছিল। গত ২৬ ডিসেম্বর ওই প্রোগ্রামে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সংঘর্ষে জড়ান নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে যুবদলের এক নেতা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। পরে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় কর্মসূচি শেষ না করে মাঝপথেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত ও ওবায়দুর রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।