ঋণ খেলাপি মামলায় ১২ কৃষককে গ্রেপ্তারের পর দেশব্যাপী আলোচনায় আসা পাবনার ঈশ্বরদীর ৩৭ জন কৃষক তাদের সুদসহ ঋণের বাকি টাকা মওকুফ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী উত্তরপাড়ার সবজি চাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য কৃষকদের পক্ষে সভানেত্রী স্থানীয় ইউপি সদস্য বিলকিস নাহার এ বিষয়ে আবেদন করেন।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে তিনি সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকার মহাব্যবস্থাপক বরাবর একটি আবেদনপত্র ব্যাংকটির পাবনা শাখায় জমা দেন। এ সময় পাবনা সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক কাজী জসিম উদ্দিন তার আবেদনপত্র গ্রহণ করেন।
আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, আমরা সাধারণ ৪০ জন কৃষক সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক লিমিটেড থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ সুদসহ গ্রহণ করেছিলাম। আমরা কৃষকরা ইতোপূর্বে প্রায় ১৩ লাখ টাকা সুদসহ পরিশোধ করেছি। আমাদের ৪০ জন কৃষকের মধ্যে ৩৭ জনের নামে ঋণ ও ঋণের সুদের মামলা হয়েছে। দেশে মহামারি করোনাভাইরাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা সাধারণ কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের পক্ষে ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঋণ ও ঋণের সুদের টাকা মওকুফ এবং মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করছি।
এ বিষয়ে কৃষকদের পক্ষে আবেদনকারী ইউপি সদস্য বিলকিস নাহার বলেন, ঋণ মওকুফ ও মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছি। দ্রুত যেন এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং আমাদের ঋণ ও সুদ মওকুফ করে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। তাহলে কৃষকরা হয়রানি থেকে বাঁচবেন।
পাবনা সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কাজী জসিম উদ্দিন বলেন, ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভানেত্রীর আবেদনপত্রটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি মেইলে সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের ঢাকার মহাব্যবস্থাপক বরাবর পাঠিয়েছি। এখন তারা এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক ওই সমিতির নামে দলগত ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান। দীর্ঘদিনেও সেই ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা করে ব্যাংকটি। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে পাঠায় পুলিশ।
বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত রোববার (২৭ নভেম্বর) পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার ১২ কৃষকসহ ৩৭ জন কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেন।