পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা এলাকার বাসিন্দা আসিয়া খাতুন। ৪৭ বছর আগে একই এলাকার রইচ শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের দুই বছর পরই গৃহহীন হয়ে পড়েন তারা। এরপর এর বাড়ি, ওর বাড়ি করেই পার করে দিয়েছেন ৪৫ বছর। তারপরও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি। সাত বছর আগে রইচ শেখের মৃত্যু হয়। এরপর আরও অসহায় হয়ে পড়েন আসিয়া। দুই সন্তানের জননী আসিয়ার অসহায়ত্ব দূর করতে এগিয়ে এসেছে পাবনা জেলা পুলিশ।
পরের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালানো আসিয়ার দুর্দশা দূর করতে আতাইকুলার চক বায়েশা গ্রামে জমিসহ একটি আধাপাকা ঘর করে দিয়েছে পুলিশ। শুধু আসিয়া নয়, পাবনার ১১টি থানা এলাকায় ১১ জন গৃহহীনকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে জেলা পুলিশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইজিপির উদ্যোগে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিসহ নির্মিত ঘরগুলো উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করবেন।
এদিকে ঘর পাওয়ার খবরে আনন্দে আত্মহারা বিধবা আসিয়া খাতুন। তার চোখেমুখে যেন স্বস্তির ছায়া। চোখে আনন্দ অশ্রু নিয়ে আসিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাবারে ক্যাবা করে যে আনন্দটা দেখাবো বুঝতিই পারছি না, খুব কষ্ট করে থাকত্যাম। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কত কষ্ট করে থাকত্যাম। ছন দিয়ে, মাটি দিয়ে, কলার পাতার ঘর করে থাকিছি, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কিযে কষ্ট। আজ পুলিশ আমাকে ঘর করে দিল, আমারে পুলিশের জন্য আমি দোয়া করি।’
তিনি বলেন, আমার বিয়ের দুই বছর পর শ্বশুর সব জমি বিক্রি করে দিল। আমাকে ও আমার স্বামীকে বের করে দিল। তখন রঘুনাথপুর এলাকার একজনের বাড়িতে উঠেছিলাম। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকেছি। পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। সাত বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। ও মারা যাওয়ার পর কী করে যে সংসার চালাইছি বলে বোঝাতে পারব না।
স্থানীয় বাসিন্দা রায়েদা খাতুন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে তাকে (আসিয়া খাতুন) অনেক কষ্ট করে জীবন-যাপন করতে দেখেছি। বিয়ের পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। তিনি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। পুলিশ তাকে বাড়িটা দিয়ে অনেক উপকার করল।
পাবনা জেলা পুলিশ জানায়, গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক থানায় একটি হতদরিদ্র পরিবারকে ন্যূনতম এক কাঠা জমি ক্রয় করে আনুমানিক ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষ, রান্নাঘর ও টয়লেট বিশিষ্ট একটি গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ এরই মধ্যেই শেষে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর ঘরগুলো পরিবারের মাঝে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আতাইকুলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশের পর অনেক যাচাই-বাছাই করে আসিয়াকে নির্বাচিত করা হয়। এমন অসহায় পরিবারকে সাহায্য করাটাও অনেক আনন্দের। ঘরের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরই আসিয়াকে ঘরটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও তার খোঁজখবর রাখা হবে।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী হতদরিদ্রদের জন্য সুষ্ঠুভাবে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অনেক মানবিক কাজ করে থাকে, অতীতেও করেছে, যা হয়তো এখন আরও বেশি দৃশ্যমান।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের খুব কাছে যেতে চাই। যাদের ঘর দেওয়া হচ্ছে তাদের অনেকেই বিধবা। তারা ভিক্ষাবৃত্তি ও গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। তাদেরই পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।